Followers

Sunday, April 30, 2023

দিনটিকে আমরা মে দিবস বলে জানি

আজ পয়লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। দিনটিকে আমরা মে দিবস বলেও জানি। আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রম অধিকার আদায়ের এ দিনটি বছরের পর বছর ধরে বিশ্বব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। শ্রমিকদের সম্মানে মে দিবস বা পয়লা মে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালন করে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ। কিন্তু যাঁদের নিয়ে এই দিবস, তাঁরা এ সম্পর্কে কতটা অবগত? অনেক শ্রমিক জানেনই না এর ইতিহাস।

উনিশ শতাব্দীর আগে কারখানার শ্রমিকদের দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চাইতেও বেশি। কিন্তু কাজ অনুপাতে পারিশ্রমিক ছিল স্বল্প। যা তাঁদের জীবনধারণের জন্য যথাযথ ছিল না। একটা পর্যায়ে
শ্রমিকপক্ষ ক্ষুব্ধ হতে থাকে। যা এক সময় আন্দোলনে রূপ নেয়। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে একদল শ্রমিক মালিকপক্ষকে দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মসময় নির্ধারণের দাবি জানায়। এ দাবি পূরণের সময় হিসেবে ১৮৮৬ সালের ১ মে নির্ধারণ করেন শ্রমিকেরা। কিন্তু কারখানার মালিকেরা শ্রমিকদের এ দাবি কানে তোলেননি। ফলাফলে ১৮৮৬
সালের ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেট নামক স্থানে ফের আন্দোলন গড়ে তোলেন শ্রমিকেরা। সেখানে পুলিশ আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি বর্ষণ করলে নিহত হন ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক।

এ ঘটনার দুই বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে ফরাসি বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেসে শিকাগো শ্রমিক আন্দোলনের দিনটিকে ১৮৯০ সাল থেকে পালনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। পরের বছর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রস্তাবনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। পরে ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বব্যাপী মে মাসের প্রথম দিন মিছিল ও শোভাযাত্রার আয়োজন করতে সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল ও শ্রমিক সংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ আহ্বানের সাড়া হিসেবে বিশ্বের প্রায় সব শ্রমিক সংগঠন ১ মে বাধ্যতামূলক কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক দেশের শ্রমিকেরা মে মাসের ১ তারিখ সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানান। বিভিন্ন দেশে মে দিবস সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে পালিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে রাশিয়া, চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ দিনটির তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার দাবি।

শ্রমিকদের অধিকার ও দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয়। স্বাধীনতার পর মে দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে মহান মে দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় মে দিবস। এই দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য থাকে শ্রমিকদের তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। যাতে করে তাঁরা মে দিবসের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারেন ও নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে আমরা মে দিবস পালন করি, সেটি কতটা সফল হয়, তা নিতে প্রশ্ন আসতে পারে। আসাটা বেশ স্বাভাবিক।

মে দিবসে সব সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তবুও কিছু মানুষ রুটিরুজির সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছেন কাজে। কারণ এক বেলা কাজ না করলে তাঁর পরিবারকে কাটাতে হবে অনাহারে। কারও কারও আবার মেলে না ছুটি। ছুটির দিনে কাজের জন্য জোটে না বাড়তি অর্থও। আট ঘণ্টা কাজের কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনিয়ম চোখে পড়ার মতো। কাজ করতে হচ্ছে আট ঘণ্টার অধিক। দেওয়া হচ্ছে না ওভারটাইম বা অতিরিক্ত সময়ের পয়সা। মে দিবস পালন তো এসব মানুষের কাছে একপ্রকার বিলাসিতাই।

আমরা দেখি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কর্মরত। প্রতিটি তৈরি পোশাক কারখানায় আট ঘণ্টার বেশি কাজ হয় প্রতিদিন। ওভারটাইম করতে আগ্রহী না থাকলেও বাধ্য হয়ে তা করতে হয়। সেই ওভারটাইমের টাকাও ঠিকমতো পাওয়া যায় না বা দিতে নানা ছলচাতুরী করে মালিকপক্ষ। শুধু গার্মেন্ট শিল্প নয়, অধিকাংশ খাতে এমন পরিস্থিতি আমরা দেখতে পাই।

ইপিজেড বা জোনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিক নিয়োগ, মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক, সর্বনিম্ন মজুরির হার নির্ধারণ, মজুরি পরিশোধ, কর্মস্থলে দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকের জখমের জন্য ক্ষতিপূরণ, শ্রমিকের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে দেশে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আইন থাকার পরও করোনা মহামারিতে অসংখ্য শ্রমিক হারিয়েছেন তাঁর আয়ের প্রধান উৎস। অফিসে (ফরমাল সেক্টর) চাকরি করেন, এমন ১৩ ভাগ মানুষ মহামারিকালে কাজ হারিয়েছেন। চাকরি আছে কিন্তু বেতন নেই, এমন মানুষের সংখ্যা আরও বেশি। আর ২৫ ভাগ চাকরিজীবীর বেতন কমে গেছে।

তা ছাড়া, বাংলাদেশেও রানা প্লাজা, তাজরীন গার্মেন্টস, রূপগঞ্জসহ অনেক দুর্ঘটনায় অসংখ্য শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন, জীবন্ত পুড়ে কয়লা হয়েছেন। সেই সঙ্গে হারিয়েছেন বহু আশা ও স্বপ্ন। অনেক পরিবার হারিয়েছে তাদের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সামান্য ক্ষতিপূরণে তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। অনেক সময় সরকার যথাযথ উদ্যোগ নিলেও মালিক-শ্রমিক সমন্বয়হীনতায় বৃথা যায় সব।

এবারের মে দিবস এমন এক সময় পালন হচ্ছে যখন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকরা স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে যে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকার কথা, সেখানে না থেকে তারা পরিবার নিয়ে গাদাগাদি করে নিম্ন মানের ঘর ভাড়া করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকছেন। যার ফলে শ্রমিক এবং শ্রমিক পরিবারের লোকজন নিরাপত্তার অভাবে থাকে ও নানান ধরনের অসুখে তারা ভুগছেন।

শ্রমিকদের যে ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার প্রয়োজন তা তারা খেতে পারেননা, ফলে তারা পুষ্ঠি হীনতায় ভুগে থাকেন। একজন শ্রমিক ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত কারখানায় কাজ করার কথা থাকলেও সে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করতে পারে। তারপর সে নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে কাজ থেকে বিদায় নেন।

বেশীরভাগ শ্রমিক তার সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে রেখে গার্মেন্টসে কাজ করতে আসে তাই সন্তানের দেখাশুনা করার জন্য যা অর্থ প্রয়োজন তা তারা দিতে পারেনা, ফলে তাদের লেখাপড়া অল্পতেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

শ্রমিকরা সমাজের বোঝা দূর করার করার জন্য গ্রাম থেকে যুবক বয়সে গার্মেন্টসে এসছিল, কিছু দিন পর কর্মক্ষমতা হারিয়ে সমাজের বোঝা হয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছে।

যার আর ফিরে যাওয়ার কোন জায়গা নেই তার কোন কোন শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। সম্প্রতিক সময়ে আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের আত্মহত্যার প্রবনতা বেড়েছে।

এতেই বোঝা যাচ্ছে, আমাদের শ্রমিকদের অবস্থা কতটা শোচনীয়। কিন্তু মে দিবস যায়, মে দিবস আসে। তাঁদের ভাগ্য দ্রুত আর পরিবর্তন হয় না। ফলে পালনের জন্য মে দিবস পালন না হোক। এর মুখ্য উদ্দেশ্যই হোক শ্রমিকের অধিকার আদায় ও শ্রমিকের নিরাপত্তা। আট ঘণ্টার অধিক কাজ নয়। এর বেশি কাজ করলে ন্যায্য মজুরি দিতে হবে, সেটি সময়মতোই। বাংলাদেশে অসংখ্য শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। শ্রমিকদের স্বার্থে তাদের আরও বেশি অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। শ্রমিকদের সব দাবি মালিকপক্ষ বা সরকারের কাছে তারা তুলে ধরতে পারে। তাতে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের দূরত্ব অনেকখানি লাঘব হবে। শ্রম আইনগুলো কঠোরতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে তৈরি করতে হবে শ্রমিকবান্ধব আইন, যা শ্রমিকদের স্বার্থে কথা বলবে। তাই অন্তত তিনবেলা খাবার, পোশাক, মাথা গোঁজার ঠাঁই, অসুস্থ হলে চিকিৎসা, সন্তানের শিক্ষা, বৃদ্ধ বয়সের জন্য সঞ্চয়, অতিথি আপ্যায়ন ও বিনোদন। তাই এসব বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা উচিত। 
বাংলাদেশর শ্রমিক সংগঠন গুলো গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরী ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা দাবী করে আসছে।

অন্যদিকে সরকার ঘটা করে মে দিবস পালন করলেও শ্রমিকদের ধর্মঘট করার অধিকার আইন করে কেড়ে নিচ্ছে। এসেনশিয়াল সার্ভিসেস মেনটেনান্স অ্যাক্ট ১৯৫২ ও দি এসেনশিয়াল সার্ভিসেস (সেকেন্ড) অর্ডিন্যান্স ১৯৫৮ এই দু’টি আইনকে এক করে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন’ করা হয়েছে।

এ আইন পাস হলে সরকার যদি মনে করে বা প্রয়োজন হয় বিভিন্ন সার্ভিসকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা ঘোষণা করতে পারবে। আর এটা ঘোষণা করলে সেখানে স্ট্রাইক (ধর্মঘট) করা যাবে না, বন্ধ করা যাবে না। মালিকরা লে-অফও করতে পারবেন না। আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ ১ বছর ও ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিতের বিধান রাখা হয়েছে।’

অত্যাবশ্যক বলতে আইনে বোঝানো হয়েছে, ডাক, টেলি যোগাযোগ, ইন্টারনেট সেবা, তথ্য প্রযুক্তিসহ সব ডিজিটাল সেবা, মোবাইল ফাইন্যান্সিং, ডিজিটাল আর্থিক সেবা, গ্যাস, বিদ্যুৎ, উৎপাদন ও সরবরাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজকে বোঝাবে।

এছাড়াও জল, স্থল ও আকাশ পথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, বিমানবন্দর পরিচালনা, স্থল ও নদীবন্দর পরিচালনা কাস্টমসের মাধ্যমে কোনো পণ্য ও যাত্রীর পণ্য ছাড় করার কাজ, সশস্ত্র বাহিনীর কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কার্যক্রম, প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য বা মালপত্র উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রম বা খাদ্য কেনা, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রম এই সেবার আওতাভুক্ত।

সরকার যদি মনে করে কোনো কারণে কখনও এসব বিষয়কে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করতে হতে, তবে ঘোষণা করতে পারবে। সে ঘোষণা সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য কার্যকর থাকবে।

কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে ধর্মঘট করলে তাকে বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা অর্থাৎ চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হবে।

বাস্তাবতা হলো শ্রমিকদের আন্দোলন জোরদার না হলে শ্রমিকদের অধিকার আদায় হয়না, বাংলাদেশে যতটুকু অধিকার শ্রমিকরা পেয়েছে তার জন্য শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে তাই আমাদের উচিৎ সকল দ্বিমত ভুলে ঐক্যবদ্ধ্য হয়ে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন গড়ে তুলি। 

Tuesday, April 11, 2023

শ্রমিক সংগঠন গুলোর মতামতের তোয়াক্কা না করেই মজুরী বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছে সরকার

 

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এর ফলে পাঁচ বছর পর পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে।

সাধারণ নিম্নতম মজুরি বোর্ড ছয় সদস্যের হয়ে থাকে। তার মধ্যে চার সদস্যের একটি স্থায়ী কমিটি রয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হন মালিক ও শ্রমিকপক্ষের দুজন প্রতিনিধি।

মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। ২০১৮ সালের সর্বশেষ মজুরি বোর্ডেও মালিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অন্যদিকে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। তিনি ২০১৩ সালের মজুরি বোর্ডে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, চার সদস্যবিশিষ্ট স্থায়ী নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন সিনিয়র জেলা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা। অন্য সদস্যরা হলেন মালিকপক্ষের প্রতিনিধি বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের উপমহাসচিব মকসুদ বেলাল সিদ্দিকী, শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মদ। নিরপেক্ষ প্রতিনিধি হিসেবে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন।

১৯৯৪ সালে শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ছিল ৯৩০ টাকা। ২০০৬ সালে সেটি বৃদ্ধি করে ১ হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। ২০১০ সালের মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৩ হাজার টাকা করা হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি কার্যকর হয়েছিল। ২০১৮ সালে ১৪ জানুয়ারি নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের পর  নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সভায় পোশাকশিল্পের মালিকেরা মজুরি মাত্র ১ হাজার ৬০ টাকা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দেন। সব মিলিয়ে তাঁরা মজুরি ৬ হাজার ৩০০ টাকা দিতে চান। অন্যদিকে শ্রমিকপক্ষ ১২ হাজার ২০ টাকা মজুরি দাবি উত্থাপন করেছিল। অথচ সে সময় গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা শ্রমিক সংগঠন গুলো ১৬ হাজার ও ১৮ হাজার টাকা দাবী জানিয়ে আসছিল। অর্থাৎ আন্দোলনকারী শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠন গুলোর সাথে মজুরী বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধির কোন সমন্বয় ছিল না।

তাই এবারো আমার মনে হয়েছে, কোন সংগঠন কত টাকা নিম্নতম মজুরী দাবী করলো এটা মূখ্য বিষয় না। মূখ্য বিষয় হলো মজুরী বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি কত টাকা নিম্নতম মজুরী দাবী উত্থাপন করলো।

তাই সরকারের উচিৎ ছিল নিম্নতম মজুরী বোর্ডে এমন একজনকে শ্রমিক প্রতিনিধি নিয়োগ যার সাথে আন্দোলনকারীদের সমন্বয় আছে। অর্থাৎ রাজপথে ও কারখানায় যে দাবীতে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে যাতে সেই দাবিই মজুরী বোর্ডেও উত্থাপিত হয়।

শ্রমিক প্রতিনিধির আন্দোলনকারীদের সাথে সমন্বয় না থাকলে শ্রমিকদের দাবীর প্রতিফলন ঘটবেনা। শ্রমিকদের দাবীর প্রতিফলন না হলে শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবেনা। 

Monday, April 10, 2023

আইন ও বিচার আসলে কার জন্য?

 

গাজীপুর মাদ্রাসার ৩য় শ্রেনীর এক ছাত্রী, নয় বছর বয়সের একটা শিশু, স্থানীয় এক প্রভাবশালী বেক্তি গত ৭এপ্রিল শুক্রবার ২০২৩ তারিখ গরুর খামারে নিয়ে ধর্ষন করে। মেয়েটি ভয়ে কাওকে কিছু বলেনি। গত ০৯ এপ্রিল রবিবার আবার তাকে ধর্ষনের চেষ্টা করলে মেয়েটি তার মাকে জানায়। মেয়েটির মা-বাবা স্থানীয় মাতব্বরদের কে জানালে তারা বিচার না করে ধর্ষন কারিকে মেয়েটির বাবা মায়ের কাছে মাফ চেয়ে নিতে বলে। পরে স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলর কে জানালে তিনি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্থ আছে বলে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। মেয়েটি ও মেয়েটির বাবা মা ০৯ এপ্রিল রবিবার থেকে থানায় আছে কিন্তু এখনো থানা কোন ব্যবস্থা নেইনি। মেয়েটির বড় বোন বিষয়টা আমাকে মাত্র ফোন করে বিষয়টি জানালো। মেয়েটির পরিবার অনেক দরিদ্র। এত রাতে এখন আমি কি ভাবে তাদের সহায়তা করতে পারি?

রানা প্লজাকে ব্যবহার করে অনেকে ফুলে ফেপে বড় হলেও শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্থই রয়ে গেছে

 

লাভলি রানা প্লাজার একজন আহত শ্রমিক। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজায় আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। লাভলি একটু সুস্থ্য হয়ে সেও আমাদের সাথে উদ্ধার কাজে যুক্ত হন। যেহেতু লাভলি রানা প্লাজায় অবস্থিত কারখানার শ্রমিক ছিল তাই তার বেশীর ভাগ শ্রমিকের সাথে পরিচিত ছিল বলে আমাদের উদ্ধার কাজ এবং আহত-নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা সহজ হচ্ছিল। আমরা লাভলির সহয়তায় বহু আহত শ্রমিক পরিবারের কাছে বিভিন্ন রকম সহায়তা পৌছে দিয়েছি। অনেক বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়েছি। রানা প্লাজায় আহত-নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরন-পূনবাসন-সু-চিকিৎসা ও রানা প্লাজার ভবন মালিক সোহেল রানা ও কারখানা মালিক সহ দায়ী বেক্তিদের গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য জন্য আমরা যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম তার প্রধান ভূমিকায় ছিল এই লাভলি। পরবর্তীতে এই লাভলিকে সভাপতি করে রানা প্লাজা গার্মেন্ট ট্রেড শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করা হয়। লাভলির মা রানা প্লাজায় আহত হয়েছিলেন তার একপায়ের রগ কেটে গিয়েছিল। লাভলির বাবা একজন রিক্সা চালক ছিলেন। এত দারিদ্রতার মধ্যে লাভলির পরিবার কোন দিন কোন সহয়তা লাইনে দাঁড়াতে দেখিনি। লাভলি রানা প্লাজা গার্মেন্ট ট্রেড শ্রমিক ইউনিয়ন এর সভাপতি হয়ে রানা প্লাজায় আহত-নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরন-পূনবাসন-সু-চিকিৎসা ও রানা প্লাজার ভবন মালিক সোহেল রানা ও কারখানা মালিক সহ দায়ী বেক্তিদের গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবীর আন্দলনে যুক্ত হওয়ার কারণে তাকে অনেক হুমকি-ধামকির শিকার হতে হয়েছে, তবুও সে পিছু পা হয়নি। লাভলির নিরাপত্তার কথা ভেবে লাভলির বাবা মা তাদের এলাকার একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। কয়েক বছর আগে লাভলি ও তার বাচ্চার সাথে দেখা হয়েছিল তখন এই ছবিটা তুলেছিলাম। এখন লাভলি কোথায় আছে কি অবস্থায় আছে জানা নেই।

এই লাভলিদের মত অনেকের অবদানে রানা প্লাজায় আহত-নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরন-পূনবাসন-সু-চিকিৎসার জন্য অনেক দেশী-বিদেশী মানুষ সহয়তার জন্য এগিয়ে এসেছিল। অনেকে এই সহয়তাকে কাজে লাগিয়ে অনেকে সম্পদের মালিক হয়েছে, অনেক এনজিও, হাসপাতাল ফুলে ফেপে বড় হয়েছে আবার কেও এমপি- মন্ত্রী হয়েছে। আর রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্থই রয়ে গেছে।

রানা প্লাজার ভবন মালিক সোহেল রানার জামিনের খবরে আমরা খুবিই হতাশ বিক্ষুব্ধ

আগামী ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা দিবস। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা। ঝুঁকি পূর্ন ভবন জেনেও কারখানা গুলোর মালিকরা পরিকল্পিত ভাবে কারখানা খোলা রাখে। শ্রমিকরা প্রতীবাদ করলে রানা প্লাজা ভবনের মালিক শ্রমিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে শ্রমিকদের জোর করে কারখানায় প্রবেশ করতে বাধ্য করে। ভবনের নিচে চাপা পড়ে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি পোশাক শ্রমিক। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে প্রায় তিন হাজার জন শ্রমিককে জীবিত উদ্ধার করা হয়,যার বেশীর ভাগ শ্রমিক পঙ্গুত্ব বরণ করে জীবন মরণের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছে।

সে সময় সারা দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকরা রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যার প্রতীবাদে ফুঁসে ওঠে, সরকার বাধ্য হয়ে প্লাজার ভবন মালিক সোহেল রানাকে গ্রেফতার করে। গার্মেন্টস কারখানার মালিকদের দ্বায় থাকলেও তাদের আত্মসমর্পণ করিয়ে জামিন দেওয়া হয়।

আগামী ২৪ এপ্রিল নানান আয়োজনে এই ঘটনার ১০ বছর পুর্তি পালনের জন্য আমরা যখন প্রস্তুনি নিচ্ছি ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা খবর পাচ্ছি। রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে তার কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

অথচ বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের শ্রমিকরা রানা প্লাজা-তাজরিনসহ সকল শ্রমিক হত্যা কান্ডের বিচার দাবী করে আসছে। সরকার রানা প্লাজায় ও তাজরিনে নিহত শ্রমিকদের পরিবারের পূনবাসন ও আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা ক্ষতিপূরণ পূনবাসন নিশ্চিত না করে বরং দ্বায়ী বেক্তিদের পূনবাসন করছেন। এর আগে তাজরিনের মালিক দেলোয়ারকে জামিন দিয়ে পূনবাসন করা হয়েছে আর আজ রানা প্লাজার ভবন মালিক সোহেল রানাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। আজ রানা প্লাজার ভবন মালিক সোহেল রানার জামিনের খবরে আমরা খুবিই হতাশ বিক্ষুব্ধ।

আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতীবাদ জানাচ্ছি।


Sunday, April 9, 2023

নগদ সহায়তা বা প্রণোদনার উপর নির্ভর বাংলাদেশের পোশাক শিল্প

 

ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে নগদ সহায়তা বা প্রণোদনার ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাড় চায় নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ।

বিকেএমইএর সভাপতি আবেদনে পত্রে লিখেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে। টিকে থাকার সংগ্রাম করছে দেশের শিল্পকারখানা। কঠিন সময় পার করছে রপ্তানি খাত। অধিকাংশ কারখানা ৫০-৬০ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে। ফলে রপ্তানি করে মাস শেষে শ্রমিকের বেতনের অর্থসংস্থান করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার যা রপ্তানি হচ্ছে, সেই অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ করছে না বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এপ্রিল মাসেই বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধের বড় চাপ আছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থ বিভাগের বিশেষ সহায়তা ছাড়া এ চাপ সামলে ওঠা কঠিন হয়ে যাবে।

রপ্তানিকারকদের নজর ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা বাবদ বাজেট বরাদ্দের দিকে।

চলতি অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতের ভর্তুকি বা নগদ সহায়তা বাবদ বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের প্রথম কিস্তি গত বছরের ২৮ আগস্ট ছাড় করা হয়েছিল ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অক্টোবর-নভেম্বর প্রান্তিকের দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয় গত ২৭ ডিসেম্বর। যদিও তখন ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার নগদ সহায়তার দাবি জমা ছিল। গত ২৮ মার্চ জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তৃতীয় কিস্তির ২ হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়। ইতিমধ্যে তিন কিস্তিতে মোট ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বাজেটে এখনো বরাদ্দ আছে ২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।

সরকারের ভর্তুকি, প্রণোদনা বা নগদ আর্থিক সহায়তা ছাড়া দেশের রপ্তানি খাত এগোতে পারছে না। অনেক খাত বছরের পর বছর নগদ সহায়তা পেয়েও টেকসই হচ্ছে না। আবার তৈরি পোশাকসহ কিছু পণ্য রপ্তানি খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেও বিশেষ সুবিধা নেয়ার অভ্যাস পরিহার করতে পারছে না।

বর্তমানে ৩৭টি খাতে পণ্য রপ্তানিকারকদের ন্যূনতম ২ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিভিন্ন হারে নগদ আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে সরকার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর রপ্তানি ভর্তুকি খাতে ৬ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর এই ভর্তুকি আরও ৭.৬৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ছে। বাজেটে রপ্তানি ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।

এর বাইরে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিবছর বাজেটে কর ছাড়ের মতো সহায়ক নানারকম সুযোগসুবিধা রাখা হয়। রপ্তানিকারকরা যেমন নিয়ম করে চলমান সুবিধা বহাল, ক্ষেত্রভেদে আরও বৃদ্ধি এবং নতুন করে আরও খাতকে এই সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান, সরকারও তেমনি নিরাশ করে না রপ্তানিকারকদের।

রপ্তানি বাড়ানোর জন্য উৎসাহ দেয়ার পেছনে রপ্তানি ভর্তুকি খাতে নগদ আর্থিক সহায়তা দেয়ার এই প্রবণতা প্রতিবছরই বাড়ছে। এভাবে রপ্তানি খাতে বছরের পর বছর চলছে ভর্তুকি বরাদ্দ। তবে এই প্রণোদনা দিয়ে দেশের রপ্তানি খাতের খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না। বরং সরকারের আর্থিক সহায়তার ওপর খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের অতিনির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে রপ্তানি খাতের সম্প্রসারণ, বহুমুখীকরণ ও গুণগত মানোন্নয়নে উদ্যোক্তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও ঝুঁকি মোকাবিলার নিজস্ব সক্ষমতা প্রকাশ পাচ্ছে না। এর ফলে দেশে টেকসই রপ্তানি খাত সৃষ্টি হওয়া নিয়ে শঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।

নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়ে রপ্তানি আয় বাড়ানোর চেষ্টা মোটেও স্থায়ী সমাধান নয়। কারণ ব্যবসা হচ্ছে ব্যক্তিকেন্দ্রিক। নিজের চেষ্টাতেই তা মেলে ধরতে হবে। সেখানে বছরের পর বছর কোনো খাত বা খাতসংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা প্রণোদনায় ভর করে চললে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সক্ষমতা হ্রাস পায়। এতে সরকারের প্রণোদনা দেয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও ব্যাহত হয়।

আলাদা ভাবে দাবী উত্থাপন করার কারণে সাধারণ শ্রমিকরা বিবভ্রান্তিতে

 

দেশের বাজারে দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি দেশের ৭ কোটির বেশি শ্রমজীনির জীবনকে দুর্বিষহ অবস্থায় ফেলেছে তা আমরা সবাই উপলব্ধি করি। শুধু চিকিৎসা, শিক্ষ বাড়ি ভাড়া, গাড়ি ভাড়া বিপুল পরিমাণ বেড়েছে তাই নয় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালিত বিদ্যুৎ, পানির দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। বিশ্ব বাজারের দোহাই এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে নিত্য পন্যের দাম বাড়ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্ধারিত বেতন কাঠামো বিবেচনা করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বৃদ্ধি করা জরুরী

করোনা পরবর্তী সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে রপ্তানিকারকদের আয় বৃদ্ধির কোন সুফল শ্রমিকরা পায়নি। অথচ ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের বর্ধিত মূলোর বোঝার চাপে শ্রমিকরা পিষ্ট হচ্ছে। প্রকৃত মজুরি অর্ধেকে নেমে যাওয়ায় জাতীয় মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির বিপরীতে শ্রমিকরা অপুষ্টি আর অনাহারে দিনযাপন করছে। এই পরিস্থিতিতে ন্যায্যতার পরিমাপে শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলি বিবেচনা করা সেই বিষয় গুলি সকলের বিবেচনা করা অতি জরুরি

যে কোন উৎপাদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শ্রমিকের শ্রমশক্তি। কারখানায় যত বেশি পুঁজি, যত উন্নতমানের কাঁচামাল এবং যত উন্নত প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হোক না কেন, শ্রমিকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শ্রম ছাড়া কোন উৎপাদন সম্ভব নাপুঁজিবাদী সমাজে শ্রমিকের শ্রমশক্তি আর মালিকের পুঁজি মিলেই উৎপাদন হয়। শ্রমিক তার শ্রমশক্তি বিক্রি করে কখনও মাসিক মজুরি অথবা কখনো পিস রেট হিসেবে। শ্রমশক্তি বিক্রিতা আর্থিকমূল্য শ্রমিক মজুরি হিসেবে গ্রহণ করে। শ্রমিকের শ্রম শক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন খরচের একটা অংশ মজুরি।

শ্রমিককে মজুরি নিয়ে উৎপাদন করিয়ে নেওয়া পণ্য বাড়তি দামে বিক্রির মাধ্যমে মালিকের মুনাফা অর্জিত হয়। শ্রমিকের মজুরি যত কম দিতে পারে মালিকের মুনাফা তত বৃদ্ধি পায়। তাই ন্যায্য মজুরির জন্য শ্রমিককে সব সময় আন্দোলনে থাকতে হয়। শ্রমিকের এই মজুরি শুধু তার জীবনধারণের জন্য নয় বরং উৎপাদন ও পুনরুৎপাদন এর কাজে ব্যবহৃত হয়। সুস্থ এবং সবল শ্রমিক যেমন উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে তেমনি পরবর্তী প্রজন্মের দক্ষ শ্রমশক্তি তাদের মাধ্যমেই আসে। শোভন মজুরি, শ্রমিকের জীবনমান, ক্রয়ক্ষমতা, দেশের অর্থনৈতিক গতি বৃদ্ধি করে থাকে। তাই পৃথিবীর প্রতিটি অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশের শ্রমিকদের গড় মজুরি অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে একটি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। জিডিপি ৭ শতাংশের মতো করে বাড়ছে, মাথাপিছু আয় ২৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং এটা ক্রমবর্ধমান। জাতীয় আয় এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালনকারী শ্রমিকদের মজুরি তার সাথে সঙ্গতি রেখে নির্ধারণ হবে এটা একটি যুক্তি সঙ্গত প্রত্যাশা। 

বিশ্ব মানবাধিকারের ঘোষণায় বলা হয়েছে- প্রত্যেক কর্মীর নিজের ও পরিবারের মানবিক মর্যাদা রক্ষায় সক্ষম এমন ন্যায্য পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

আইএলও কনভেনশন ১৩১ এ বলা হয়েছে- সর্বনিম্ন মজুরি অবশ্যই আইন দ্বারা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক ও তার পরিবারের প্রয়োজন, জীবনযাত্রার ব্যয়, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা ইত্যাদিকে বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে হবে

শ্রমিক সংগঠন গুলোর দাবী

বাংলাদেশের ১২টি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ) ও ১৫টি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের জোট ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) যৌথ ভাবে গার্মেন্টস শিল্পের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করে ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের ১৫টি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্পরক্ষা জাতীয় মঞ্চ ও ০৯টি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক পরিষদ গার্মেন্টস শিল্পের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করে ন্যূনতম মজুরি ২৪ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের ১০টি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন ও গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র যৌথ ভাবে গার্মেন্টস শিল্পের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের ০৭টি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের জোট বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ও বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন গার্মেন্টস শিল্পের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করে ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

নিম্নতম মজুরীর দাবী নিয়ে শ্রমিকদের মধ্য বিবভ্রান্তি

বেশ কয়েক বছর থেকে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন জাতীয় নূন্যতম মজুরি ২০ হাজার টাকা দাবী করে আসছিল এবং সাধারণ শ্রমিকরা নূন্যতম মজুরি ২০ হাজার টাকার দাবীর জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, শ্রমিকরা এই দাবীতে আন্দোলন করছিল। সাধারণ শ্রমিকরা জাতীয় নূন্যতম মজুরি কি এবং কিভাবে জাতীয় নূন্যতম মজুরি নির্ধারন হয় তা সম্পর্কে অবগত না তাই গার্মেন্ট শ্রমিকরা নূন্যতম মজুরি ২০ হাজার টাকার দাবী তাদের দাবী মনে করেছে কিন্তু বর্তমানে গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা শ্রমিক সংগঠন গুলো ২২ হাজার, ২৩ হাজার, ২৪ হাজার, ২৫ হাজার টাকা আলাদা আলাদা ভাবে দাবী উত্থাপন করার কারণে সাধারণ শ্রমিকরা বিবভ্রান্তিতে পড়েছে।

শ্রমিক সংগঠন গুলোর কাছে আমার পরামর্শ সকল সংগঠন ও জোট সবাই মিলে আলোচনা করে একটা দাবী উত্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যালাইন্স এর গবেষণা

এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যালাইন্স এর ২০২২ সালের গবেষণা অনুযায়ী একজন গার্মেন্টস শ্রমিক মাসে গড়ে আয় করে ১০,১২১ টাকা এবং ৪ জনের একটি শ্রমিক পরিবার গড়ে মাসে সর্বমোট আয় করে ২৪,১৩৭ টাকা।

৪ জনের একটি শ্রমিক পরিবার গড়ে মাসে খাবার বাবদ খরচ করে ১০,৭৫৪ টাকা এবং ঘর ভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষা, পোশাকসহ অন্যান্য খরচ করে ১৩,৬১৯ টাকা। ৪ জনের একটি শ্রমিক পরিবার গড়ে মাসে সর্বমোট খরচ করে ২৪,৩৭৩ টাকা। যা ক্যালরি হিসাব করলে প্রতিদিন ১ জনে ১,৯৫০ কিলো ক্যালরি। যেখানে তার দরকার ৩ হাজার কিলো ক্যালরি সমপরিমাণ।

প্রতিদিন একজন শ্রমিকের ৩ হাজার কিলো ক্যালরি সমপরিমাণ খাবার প্রয়োজন হলে ৪ জনের একটি পরিবারে গড়ে ১২ হাজার কিলো ক্যালরি প্রয়োজন। অর্থাৎ ৪ জনের একটি শ্রমিক পরিবার গড়ে মাসে খাবার বাবদ দরকার ১৯,৪১২ টাকা এবং ঘর ভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষা, পোশাকসহ অন্যান্য খরচ বাবদ দরকার ২৩,৭২৬ টাকা। ৪ জনের একটি শ্রমিক পরিবার গড়ে মাসে সর্বমোট আয় করা দরকার  ৪৩,১৩৯ টাকা।

তার মানে ৪ জনের একটি শ্রমিক পরিবার গড়ে মাসে আয় করা দরকার  ৪৩,১৩৯ টাকা কিন্তু আয় করে ২৪,১৩৭ টাকা। প্রতি মাসে ঘাটতি ১৯,০০২ টাকা।

শ্রমিকরা কিভাবে জীবন ধারণ করছে।

শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকরা স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে যে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকার কথা, সেখানে না থেকে তারা পরিবার নিয়ে গাদাগাদি করে নিম্ন মানের ঘর ভাড়া করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকছেন। যার ফলে শ্রমিক এবং শ্রমিক পরিবারের লোকজন নিরাপত্তার অভাবে থাকে ও নানান ধরনের অসুখে তারা ভুগছেন

শ্রমিকদের যে ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার প্রয়োজন তা তারা খেতে পারেননা, ফলে তারা পুষ্ঠি হীনতায় ভুগে থাকেন। একজন শ্রমিক ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত কারখানায় কাজ করার কথা থাকলেও সে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করতে পারে। তারপর সে নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে কাজ থেকে বিদায় নেন।

বেশীরভাগ শ্রমিক তার সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে রেখে গার্মেন্টসে কাজ করতে আসে তাই সন্তানের দেখাশুনা করার জন্য যা অর্থ প্রয়োজন তা তারা দিতে পারেনা, ফলে তাদের লেখাপড়া অল্পতেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে

শ্রমিকরা সমাজের বোঝা দূর করার করার জন্য গ্রাম থেকে যুবক বয়সে গার্মেন্টসে এসছিল, কিছু দিন পর কর্মক্ষমতা হারিয়ে সমাজের বোঝা হয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছে।

যার আর ফিরে যাওয়ার কোন জায়গা নেই তার কোন কোন শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। সম্প্রতিক সময়ে আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের আত্মহত্যার প্রবনতা বেড়েছে।

আমার প্রস্তাবনা

অন্তত তিনবেলা খাবার, পোশাক, মাথা গোঁজার ঠাঁই, অসুস্থ হলে চিকিৎসা, সন্তানের শিক্ষা, বৃদ্ধ বয়সের জন্য সঞ্চয়, অতিথি আপ্যায়ন ও বিনোদন। তাই এসব বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা উচিত।

শ্রমিকদের মজুরি পর্যালোচনায় নতুন বোর্ড গঠনের সরকারি উদ্যোগ

মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা কারণেই বেতন বাড়ানোর দাবি করে আসছে পোশাক শ্রমিক ও তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা শ্রমিক সংগঠনগুলো। এদিকে বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ীও, পাঁচ বছর পরপর শিল্প খাতের শ্রমিকদের মজুরি পর্যালোচনার বিধান রয়েছে এর পরিপ্রেক্ষিতেই পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি পর্যালোচনায় নতুন বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্হান মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মজুরি বোর্ড গঠনের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি ২০২৩) শ্রমিক ও কারখানা মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের নামের তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়।

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি পর্যালোচনায় সর্বশেষ বোর্ড গঠন হয় ২০১৮ সালে ১৪ জানুয়ারি। নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা দেয়া হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। তার আগে ২০১৩ সালে সর্বনিম্ন গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি ছিল ৫ হাজার ৩০০ টাকা। সেটি পর্যালোচনা শেষে ২০১৮ সালে পুনর্নির্ধারণ করা ন্যূনতম মজুরি হার ছিল ৮ হাজার টাকা। শ্রম আইন অনুসরণ করেই ২০১৮ সালের পর এ বছর ২০২৩ সালে  শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হার পুনর্নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

নিম্নতম মজুরী বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধির ভূমিকা

১৯৯৪ সালে শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ছিল ৯৩০ টাকা। ২০০৬ সালে সেটি বৃদ্ধি করে ১ হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। ২০১০ সালের মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৩ হাজার টাকা করা হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি কার্যকর হয়েছিল ২০১৮ সালে ১৪ জানুয়ারি নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের পর  নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সভায় পোশাকশিল্পের মালিকেরা মজুরি মাত্র ১ হাজার ৬০ টাকা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দেন। সব মিলিয়ে তাঁরা মজুরি ৬ হাজার ৩০০ টাকা দিতে চান। অন্যদিকে শ্রমিকপক্ষ ১২ হাজার ২০ টাকা মজুরি দাবি উত্থাপন করেছিল অথচ সে সময় গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা শ্রমিক সংগঠন গুলো ১৬ হাজার ও ১৮ হাজার টাকা দাবী জানিয়ে আসছিল। অর্থাৎ আন্দোলনকারী শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠন গুলোর সাথে মজুরী বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধির কোন সমন্বয় ছিল না।

তাই এবারো আমার মনে হয়েছে, কোন সংগঠন কত টাকা নিম্নতম মজুরী দাবী করলো এটা মূখ্য বিষয় না। মূখ্য বিষয় হলো মজুরী বোর্ডে কে শ্রমিক প্রতিনিধি হলো এবং সে কত টাকা নিম্নতম মজুরী দাবী করলো। তাই আমাদের উচিৎ নিম্নতম মজুরী বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি কে হচ্ছে তার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া। মজুরী বোর্ডে এমন একজন শ্রমিক প্রতিনিধি প্রেরণ করতে হবে যার সাথে আন্দোলনকারীদের সমন্বয় আছে। অর্থাৎ রাজপথে কারখানায় যে দাবীতে আন্দোলন হবে সেই দাবিই মজুরী বোর্ডেও উত্থাপিত হবে।

জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ এর একটি রোডম্যাপ

  বর্তমানে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক কোন ভিত্তি নেই। তবুও যেহেতু একটা আন্দোলনের...