বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এই অগ্রযাত্রায় পুরুষের পাশাপাশি নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ অনস্বীকার্য। একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণে নারীর অবাধ চলাচল, স্বাধীনতা এবং সকল ক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সময়ের দাবি। কোনো সমাজই তার অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পশ্চাৎপদ রেখে সামগ্রিক উন্নতি লাভ করতে পারে না।
সংবিধানের
২৮(১) ও ২৮(২) অনুচ্ছেদে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা সুস্পষ্টভাবে বলা
হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আজও বাংলাদেশের নারীরা নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার।
শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সম্পত্তির অধিকার, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং জীবনে
তাদের অবাধ চলাচল প্রায়শই সামাজিক ও পারিবারিকভাবে নানা বাধার সম্মুখীন হয়। এই
পরিস্থিতি নারীর ব্যক্তিগত বিকাশকে যেমন ব্যাহত করে, তেমনি জাতীয় উন্নয়নের ধারাকেও
মন্থর করে দেয়।
নারীর অবাধ
চলাচল ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মস্থল বা
অন্য কোনো প্রয়োজনীয় স্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নারীর কোনো প্রকার ভয় বা বাধার
সম্মুখীন হওয়া উচিত নয়। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। একইসাথে,
পরিবার ও সমাজের পুরুষ সদস্যদের মানসিকতার পরিবর্তনও জরুরি। নারীকে কেবল
গৃহস্থালির কাজের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে, তাদের বাইরে জগৎ দেখার এবং নিজেদের
সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে।
সম্পদের
ক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পৈতৃক সম্পত্তি এবং
অন্যান্য আর্থিক ক্ষেত্রে নারীর ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা গেলে তারা
অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে। এটি তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়াবে
এবং সমাজে তাদের মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করবে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নারীর ক্ষমতায়নের
অন্যতম ভিত্তি।
শুধু চলাচল বা
সম্পদ নয়, সকল ক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান,
রাজনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, খেলাধুলা –
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অবাধ অংশগ্রহণ এবং পুরুষের সমান সুযোগ থাকা উচিত।
মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নারী তার স্থান করে নেবে, এটাই হওয়া উচিত সমাজের
মূলনীতি।
নারীর সমঅধিকার
প্রতিষ্ঠার পথে বিদ্যমান আইনি ও সামাজিক বাধাগুলো দূর করতে হবে। বাল্যবিবাহ, যৌতুক
প্রথা, নারী নির্যাতন এবং অন্যান্য সকল প্রকার বৈষম্যমূলক practices
কঠোর হাতে দমন করতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনকে আরও কার্যকর করতে হবে এবং
এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
সরকার,
পরিবার, সমাজ এবং প্রতিটি নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বাংলাদেশে নারীর
অবাধ চলাচল, স্বাধীনতা এবং সকল ক্ষেত্রে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আসুন,
আমরা সকলে মিলে একটি এমন ভবিষ্যৎ নির্মাণ করি যেখানে বাংলাদেশের নারীরা নির্ভয়ে
তাদের জীবন পরিচালনা করবে এবং জাতীয় উন্নয়নে সমান অংশীদার হবে। এই লক্ষ্য অর্জনের
মাধ্যমেই আমরা একটি সত্যিকারের উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।
খাইরুল মামুন মিন্টু, আইন বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র
No comments:
Post a Comment