Followers

Wednesday, May 28, 2025

বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানোর সময় এখন

 

বাংলাদেশে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানোর সময় এখন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তাদের আরও দৃঢ় এবং সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশে একসময় বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর বেশ শক্তিশালী অবস্থান ছিল। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরবর্তী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তবে কালের পরিক্রমায় এবং নানা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেই ঐতিহ্য কিছুটা ম্লান হয়ে গেছে। বর্তমানে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, যার কারণে তাদের কার্যক্রম এবং প্রভাব কিছুটা সীমিত হয়ে পড়েছে।

তবে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর আবার মাথা তুলে দাঁড়ানোর এবং একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিশেষত, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির ক্রমবর্ধমান উত্থান একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর সক্রিয় হওয়া এবং নিজেদের সংগঠিত করা আরও বেশি জরুরি।

স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, যারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে নস্যাৎ করতে চায়, তারা বিভিন্নভাবে সমাজে তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। ইতিহাস বিকৃতি, সাম্প্রদায়িক উস্কানি এবং মৌলবাদী চিন্তাধারা প্রসারের মাধ্যমে তারা তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে পারে।

প্রথমত, শিক্ষা ব্যবস্থার বাণিজ্যিকীকরণ এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা নানা ধরনের অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো ঐতিহাসিকভাবেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ছিল। এই পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির অপতৎপরতার বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের শক্তিশালী উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত একটি সুস্থ ছাত্র রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো একটি বিকল্প এবং প্রগতিশীল ধারা তৈরি করতে পারে। একই সাথে, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির বিষাক্ত অনুপ্রবেশ রুখে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনানির্ভর একটি সুস্থ ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।

তৃতীয়ত, জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো একটি নীতিগত অবস্থান নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে। সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে তাদের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথে চালিত করতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির যেকোনো ধরনের আস্ফালন এবং তাদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে এবং প্রতিবাদে মুখর হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং তাৎপর্য ছাত্র সমাজের মধ্যে তুলে ধরতে হবে।

তবে এই মুহূর্তে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোকে কিছু অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। নিজেদের মধ্যেকার বিভেদ ভুলে গিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি। একই সাথে, ছাত্রছাত্রীদের কাছে তাদের প্রাসঙ্গিকতা এবং প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করতে হবে। গতানুগতিক স্লোগান এবং কর্মসূচির বাইরে গিয়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন আঙ্গিকে ছাত্র আন্দোলনকে সংগঠিত করতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির মোকাবিলায় একটি সুচিন্তিত এবং কার্যকর কৌশল প্রণয়ন করতে হবে।

তাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, ছাত্ররাই সমাজের ভবিষ্যৎ। একটি প্রগতিশীল, যুক্তিবাদী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছাত্র সমাজ গঠনের লক্ষ্য নিয়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে সমাজের বৃহত্তর পরিসরে ছাত্র আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং সাধারণ মানুষের সাথে একটি শক্তিশালী যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে জনমত গঠনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানোর এটাই উপযুক্ত সময়। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার জন্য তাদের আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। তাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য, আদর্শ এবং ত্যাগদীপ্ত ইতিহাসকে সাথে নিয়ে নতুন উদ্যমে পথ চলতে হবে। ছাত্র ও সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে একটি শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ বামপন্থী ছাত্র আন্দোলন সময়ের দাবি, যা একইসাথে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির উত্থানকে রুখে দিতে সক্ষম হবে।

No comments:

Post a Comment

জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ এর একটি রোডম্যাপ

  বর্তমানে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক কোন ভিত্তি নেই। তবুও যেহেতু একটা আন্দোলনের...