সম্প্রতিক আশুলিয়া-গাজীপুর সহ বিভিন্ন গার্মেন্ট শিল্প অঞ্চলে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ,
চাকুরীর নিশ্চয়তা, প্রডাকশনের চাপ কমানো,
শ্রমিক ছাঁটায় বন্ধ সহ শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবী নিয়ে গার্মেন্ট কারখানার
শ্রমিকরা এবং চাকুরী প্রত্যাশী শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন।
কয়েকটি
কারখানার মালিক শ্রমিকদের দাবীর বিয়য় সমাধান করলেও শিল্পাঞ্চলে আন্দোলন থামেনি বরং
দিনে দিনে আন্দোলন ছড়িয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন হলো
আন্দোলন কেন ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাস এর পর থেকে জিনিসপত্রের দাম
বেড়েছ প্রায় দিগুন থেকে তিন গুন। ঘর ভাড়া, জীবন যাত্রার ব্যয় সব কিছু বেড়েছে। যার কারণে শ্রমিকরা যা বেতন পাই তা দিয়ে শ্রমিকদের একার পক্ষে চাকুরী করে পরিবার
পরিজন নিয়ে জীবন ধারণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। যার কারণে স্বামী-স্ত্রী বা নারী-পুরুষ সমান ভাবে কাজ করতে
চান।
কারখানার প্রকার
ভেদ যদি ধরা হয় তাহলে গার্মেন্ট বলতে আমরা বুঝি,ওভেন, ডেনিম, নিটিং আবার নিটিং
এর মধ্যে দুই রকম একটা গেঞ্জি নিটিং আরেকটি সোয়েটার্স নিটিং। আরেকটি কারখানার প্রকার হলো ট্রেক্সটাইল এর টেক্সটাইলের সাথে যুক্ত কারখানার হলো, স্প্লিং, ডাইনিং, ওয়াশিং। এই সবগুলো কারখানা গার্মেন্ট এর সাপ্লায়ের সাথে যুক্ত।
কারখানার প্রকার
ও কারখানায় কাজের লাইন ভেদে নারী ও পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ দেন মালিকরা। কোন জায়গায়
নারী বেশী আবার কোন জায়গায় পুরুষ বেশী। যার কারণে গড় করলে নারী-পুরুষ শ্রমিকের খুব
বেশী পার্থক্য নেই। তবে গার্মেন্ট
কারখানার ওভেন, ডেনিম, গেঞ্জি
নিটিং এর সব থেকে বড় বিভাগ হলো সুইং সেখানে কাজ করে বেশীর ভাগ নারী শ্রমিক।
কারখানার গেইটে নারী ও পুরুষ শ্রমিক দুজন যদি চাকুরীর প্রত্যাশায় আসে তাহলে
গার্মেন্ট মালিকরা নারী শ্রমিককে নিয়োগ দেন।
যার কারণে
দেখা যাচ্ছে পুরুষ শ্রমিক চাকুরী না পেয়ে বেকার থাকতে হচ্ছে এবং তার স্ত্রীর আয়ের
উপর নির্ভর থাকতে হচ্ছে। তার স্ত্রী একা যে বেতন পাচ্ছে তা দিয়ে পারিবারিক ব্যয়
মিটাতে পারছেন না, অনেক ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ অশান্তি দেখা
দিচ্ছে। পুরুষ শ্রমিক বেকার থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে তাকে ঘর ঝাড়ু দেওয়া,
রান্নাবান্না, কাপড় ধোয়া, বাচ্চা সামলানোসহ অনেক ঘরের কাজ করতে হচ্ছে যা সে মনে
করছে তার জন্য অসম্মানের।
যার কারনে
পুরুষ শ্রমিকরা চাকুরী চেয়ে কারখানার গেইটে বিক্ষোভ করছেন এবং তাদের বিক্ষোভে
সমর্থন দিচ্ছে কারখানার ভিতরে থাকা নারী-পুরুষ উভয় শ্রমিকরা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কারখানায়
না পূরণ হওয়া দাবী, অতিরিক্ত প্রডাকশনের চাপ, কথায় কথায় চাকুরিচ্যুত করা এবং
কর্মকর্তাদের খারাপ আচরণ। এর পাশাপাশি মালিকদের নেতৃত্বের দন্দ, ঝুট ব্যবসার
ভাগাভাগি এবং কিছু সুযোগ সন্ধানি লুটপাট কারী যারা শ্রমিকদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে
কারখানায় লুটপাট করেন। সব মিলিয়ে শ্রমিকদের এই আন্দোলন।
শ্রমিকদের দাবী ও সমাধান
·
কারখানায় নিয়োগে নারী-পুরুষের
নিয়োগে সমতা নিশ্চিত করা এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তা উল্লেখ করা।
·
শ্রমিকদের জীবন
মান অনুযায়ী বেতন পুন-নির্ধারিন করা।
·
শ্রমিকদের জন্য
রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা।
·
প্রডাকশনের চাপ
কমানো।
·
শ্রমিক
ছাঁটায়-নির্যাতন বন্ধ করে চাকুরীর নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা।
·
বিজিএমইএ এর শ্রমিকদের তথ্য ভান্ডারে
শ্রমিকদের নামে নিতিবাচক বক্তব্য লিখে কালো তালিকা করা বন্ধ করতে হবে।
·
কারখানায় কারখানায়
শ্রমিকদের সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে সমাধান করা।
·
ঝুট ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত
করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
·
গার্মেন্ট মালিকরা
নিজেদের মধ্যে উস্কানিমূলক বক্তব্য না দেওয়া।
·
শিল্পাঞ্চলে
নিরাপত্তা বাড়ানো।
আমরা দেখছি শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান না করে মালিকরা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সামনে আনছেন। শ্রমিকরা তাদের দাবী নিয়ে আন্দোলন করলে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা আগেও বলা হতো এখনো তাইই বলা হচ্ছে। অথচ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা একেবারেই কম না। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেমন ছাত্ররা জীবন দিয়েছে তেমনি শ্রমিকরাও জীবন দিয়েছে অথচ শ্রমকিদের অবদানের কথা কোথাও স্বীকার করা হচ্ছেনা। শ্রমিকরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হছিল তাদের সাথে যে বৈষম্য করা হচ্ছে তা দুরকরার জন্য কিন্তু সেই বৈষম্য কি দূর হবে?
লিখেছেনঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, আইন বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।
No comments:
Post a Comment