সাভার-আশুলিয়া-ধামরাই এবং ডিইপিজেড নিয়ে
এই শিল্প জনে প্রায় চৌদ্দ থেকে পনের শত গার্মেন্ট কারখানা আছে
যার মধ্যে পনের থেকে বিশটি গার্মেন্ট কারখানায় শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবীতে কর্মবিরতি পালন
করছেন। যা পার্সেন্ট করলে হয় মাত্র এক থেকে দুই পার্সেন্ট।
তাহলে আমার কথা হলো মাত্র এক থেকে দুই পার্সেন্ট
কারখানায় এই আন্দোলন কেন? এবং বারবার বিজিএমই’তে আলোচনা হলেও এই কারখানা গুলোতে সমাধান
হচ্ছে না কেন?
আশুলিয়াতে পনের আগস্টের পরে ডিইপিজেড এর
গেইটে চাকুরীপ্রত্যাশী ও বহিরাগতরা প্রথম আন্দোলন করে এবং তা কিছুদিন পর নিয়ন্ত্রণে
আসে। পরবর্তীতে পঁচিশ আগস্ট ডিইপিজেড এর বাইরের কারখানা ডংলিয়ন নামের একটি কারখানায়
আন্দোলন হয় এবং ছাব্বিশ আগস্ট শ্রমিকদের দাবী মেনে নেওয়ার কারনে শ্রমিকরা কাজে ফিরে
যায়। এবং এই আন্দোলনের পর পর্যায় ক্রমে বিভিন্ন কারখানায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। যা এখন
নিয়ন্ত্রণে।
গতকালের বিজিএমইতে মতবিনিময় সভায় গার্মেন্ট
মালিকদের আচরণ দেখে মনে হয়েছে তারা সমাধান চান না বরং সমস্যা জিইয়ে রাখতে চান। কারখানার
মালিকরা যে শ্রমিকদের সমস্যার কথা শুনতে বা বুঝতে চান না গতকালের আচরণে তা প্রমান হয়েছে।
তারা চান ১৩/১ ধারায় কারখানা বন্ধ করে সমস্যা জিইয়ে রেখে শ্রমিকদের নামে মামলা দিয়ে
কিছু শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত করতে কিন্তু বর্তমান সরকার তা হতে দিতে চাচ্ছেন না। এই জন্য
কিছু মালিক বর্তমান সরকারের উপর ক্ষুব্ধ। তাই তারা গতকাল মতবিনিময় সভায় হট্টগোল করেছেন।
বাস্তবতা হলো, কারখানা মালিকদের ২০২৪ সালের
কাজের যে তার্গেট ছিল তা শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজ করিয়ে পূরণ করে ফেলেছেন। অর্থাৎ এক
বছরের কাজ তারা শ্রমিকদের দিয়ে আট মাসেই করিয়ে নিয়েছেন। এখন কিছু গার্মেন্ট মালিকরা
চাচ্ছেন কারখানায় কিছু শ্রমিক কমিয়ে আনতে। কিন্তু শ্রমিক কমিয়ে আনতে হলে শ্রম আইনের
২৬ ধারা অথবা ২০ ধারায় করতে হবে যেখানে শ্রমিকদের আইনগত পাওনার বিষয়টা চলে আসে কিন্তু
যদি ১৩/১ ধারায় কারখানা বন্ধ করে সমস্যা জিইয়ে রেখে শ্রমিকদের নামে মামলা দিয়ে কিছু
শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত করা যায় তাহলে বিজিএমইএর আরবিটিশনে আলোচনা করে শ্রমিকদের লামসাম
পাওনা দিয়ে বিদায় দেওয়া যাবে। ইতি মধ্যে বেশ কিছু কারখানায় শ্রমিকদের নামে মিথ্যা মামলা
দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের নামের তালিকা কারখানার নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গার্মেন্ট মালিকরা প্রতিবছরের এই সময়ে একি
কাজ করেন। শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত করার জন্য তিন ধরনের শ্রমিককে তার্গেট করা হয়। প্রথম
তার্গেট করা হয় যে সব শ্রমিকরা কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাই এবং বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের
পক্ষে কথা বলেন বা প্রতিবাদী শ্রমিক। দ্বিতীয় টার্গেট করা হয় যেসব শ্রমিকদের বয়স ৩৫
পার হয়েছে বা যাদের শারীরিক কাজের সক্ষমতা কমে গিয়েছেন। তৃতীয়ত তার্গেট করা হয় যাদের
কারখানায় চাকুরীর বয়স এক বছরের নিচে।
তাই আমার মনে হয়েছে গার্মেন্ট সেক্টরে অস্থিরতার
জন্য গার্মেন্ট মালিক জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা উচিৎ। এবং পাশাপাশি মালিক-শ্রমিকের আন্তরিকতার কোন অভাব
আছে কিনা তাও দেখা উচিৎ।
লিখেছেনঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, আইন বিষয়ক
সম্পাদক, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।
No comments:
Post a Comment