২৪ এপ্রিল ২০১৩, বাংলাদেশের ঢাকার সাভার রানাপ্লাজায় গার্মেন্ট মালিকদের অবহেলায় ১১৩৯
জন শ্রমিক নিহত হয়। আহত হয় ২৫০০ জন শ্রমিক। যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প
দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। রানা প্লাজা আট তলা বাণিজ্যিক এ ভবনে পাঁচটি
পোশাক কারখানা ছিল। নিউওয়েভ বটমস লিমিটেড, নিউওয়েভ
স্টাইল লিমিটেড, ফ্যানটম অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যানটম ট্যাকের লিমিটেড, ইথারটেক্সে লিমিটেড,
এই পাঁচটি গার্মেন্টস কারখানায় প্রায় ৫০০০ এর মত শ্রমিক কাজ
করত। কারখানাগুলিতে বেনেটন, জারা, দ্য চিলড্রেনস প্লেস, এল কর্টে ইঙ্গলেস,
জো ফ্রেশ, ম্যাঙ্গো, মাতালান, প্রাইমার্ক এবং ওয়ালমার্ট সহ
আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি করতো।
২৪ এপ্রিল সকাল
৮.৪৫ মিনিট। হঠাৎ ধ্বংস্তুপে পরিণত হয় সাভারের রানা প্লাজা। সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব
ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়। ভবনটিতে পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক এবং একাধিক অন্যান্য দোকান ছিল, সকালে
ব্যস্ত সময়ে এই ধসের ঘটনাটি ঘটে। ভবনটিতে ফাটল থাকার কারণে ভবন না ব্যবহারের
সতর্কবার্তা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল। ২৩ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে ফাটল নিশ্চিত
হওয়ার পর শ্রমিকদের ভবন ছেড়ে চলে যেতে বলা হয় তা সত্ত্বেও, গার্মেন্ট শ্রমিকদের পরের দিন ২৪ এপ্রিল শ্রমিকদের কাজে ফিরতে বলা হয়।
এদিন ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা। বাংলাদেশের পোশাক খাতের দুর্বলতা আর
অব্যবস্থাপনার প্রতীক হিসেবে বিধ্বস্ত রানা প্লাজা বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে। ২৪
এপ্রিল ২০১৩ পোশাক শিল্পের ইতিহাসে ট্র্যাজেডির এক দিন। এরপর পোশাক খাতের সংস্কারে
আইএলও’র নেতৃত্বে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় একোর্ড, এলায়েন্স।
শুরু হয় সংস্কার কাজ। প্রাথমিকভাবে সাড়ে তিন হাজার কারখানাকে সংস্কার কর্সসূচির
আওতায় আনা হয়। বর্তমানে শক্ত অবস্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক
খাত।
ক্ষতিগ্রস্ত
শ্রমিক ও তাদের পরিবারগুলোকে এতো বছরেও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। আহতদের পুনর্বাসন
হয়নি। তাদের বেশিরভাগ শ্রমিকরা কাজে ফিরতে না পারায় অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন
করছেন। তাই অবিলম্বে, মর্যাদাপূর্ণ মজুরি ও নিরাপদ
কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে যৌথ নিয়োগকর্তার দায়বদ্ধতা, রানা
প্লাজার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসা, রানা প্লাজায়
শ্রমিক হত্যাকান্ডে গার্মেন্ট ও ভবন মালিকসহ দায়ীদের বিচারে শাস্তি নিশ্চিত করতে
হবে। এবং ২৪ এপ্রিল গার্মেন্ট শিল্পে সাধারণ ছুটি ঘোষণা, রানা
প্লাজার জায়গা অধিগ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের জন্য পেনশন স্কিম চালু ও
শ্রমিকদের স্মরণে স্থায়ী বেদী নির্মান করতে হবে।
লেখকঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, আইন বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র
No comments:
Post a Comment