গাজীপুরের
সাতাশ রোডে অবস্থিত প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড কারখানার প্রায় ২ হাজার ৫ শত
শ্রমিক গত মে মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস এর দাবীতে আন্দোলন করছিল। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী
২৫ জুন এর মধ্যে সকল শ্রমিকদের ঈদ বোনাস-জুন মাসের ১৫ দিনের বেতন সহ সকল বকেয়া পাওনা
পরিশোধ করার কথা। কিন্তু প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড কারখানার মালিক শ্রমিকদের
কোন পাওনা পরিশোধ করেননি। শ্রমিকরা কারখানার ভিতর বেতনের জন্য অবস্থান করে বিক্ষোভ
করছিল। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিল বাংলাদেশ
গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের গাজীপুর জেলার সভাপতি
শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম। সন্ধ্যার পর প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড কারখানার
মালিকপক্ষের নির্দেশে স্থানীয় ঝুট-টিফিন ব্যাবসায়ীর লোকজন শ্রমিকনেতা ও শ্রমিকদের উপর হামলা করেন। হামলায় অনেকে
আহত হয়। আহত অবস্থায় শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলামকে শ্রমিকরা উদ্ধার করে স্থানীয় তায়রুননেছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাত্রি ১০ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম মারা যান।
২০১২ সালের ৪ এপ্রিল ডিইপিজেড
এর শান্তা ডেনিম নামের একটি কারখানায় আন্দোলন চলছিল। কিছু শ্রমিকরা আমার সাথে এবং কিছু
শ্রমিকরা আমিনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করছিল। আমি শ্রমিকদের পরামর্শ দিয়েছিলাম যে তারা
যেন এক সংগঠনের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেন। কারণ শ্রমিকরা দুই ভাগ হয়ে গেলে তাদের
দাবী আদায় হবেনা। শ্রমিকদের সাথে মিটিং শেষ করে বিকালে আমিনুল ইসলাম এর সাথে শ্রমিদের
দাবী বাস্তবায়নের বিষয়ে আমার কথা হয়েছিল। ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় আমাকে সাদা পোশাকের পুলিশ
সদস্যরা শিমূলতলা একটি গোডাউনে ডেকে নিয়ে যায় এবং আমাকে এই আন্দোলন নিয়ে অনেক জিজ্ঞাবাদ
করে। আমি ওখান থেকে বের হয়ে লাবনীর কাছে যানতে পারি আশুলিয়ার শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলামকে
পুলিশের লোকেরা ধরে নিয়ে গিয়েছে এবং এক দিন পর ৬ এপ্রিল ২০১২ ইং তারিখ তার লাশ পাওয়া
যায়। আমিনুল ইসলাম হত্যাকন্ডের বিচার এখনো হয়নি।
শ্রমিকনেতাদের
হত্যাকন্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
ও হত্যাকান্ডে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক
শাস্তির নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
এমন হত্যাকান্ড
ও শ্রমিকদের উপর হামলা বারবার হচ্ছে। কিন্তু বিচার কি হচ্ছে? আর বিচার হবেই বা কেন?
বাংলাদেশে গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে প্রায় ১০০টি শ্রমিক ফেডারেশন।
সবাই কি এক জায়গায় দাঁড়াতে পেরেছে? পারেনি। অধিকাংশ শ্রমিক সংগঠন গুলো সরকার ও মালিকদের
দালালে পরিণীত হয়েছে। সরকার ও মালিকদের দালালীর কারণে শ্রমিক সংগঠন গুলোর মধ্যে মতবিরোধ
ও টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব। এই মতবিরোধকে পুঁজি করে
বারবার শ্রমিক হত্যাকন্ড হচ্ছে এবং শ্রমিকদের উপর দমন নির্যাতন হচ্ছে। কারখানায় কারখানায়
বে-আইনি ভাবে শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুত করা হচ্ছে। সাধারণ শ্রমিকরা আজ দিশেহারা অবস্থায়।
এমন একটা
সময় শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলামকে হত্যা করা হলো যখন গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির
দাবী জোরদার হচ্ছে। শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলামকে হত্যা করে গার্মেন্টস মালিকরা কি বার্তা
দিতে চাচ্ছে এটা শ্রমিনেতাদের বোঝা উচিৎ।
আমি মনে
করি এখনো সময় আছে, শ্রমিক সংগঠন গুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে মালিকদের এই আচরণের বিরুদ্ধে রুখে
দাঁড়ানোর।
No comments:
Post a Comment