২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ড। শ্রমিক হত্যা দিবস, ১২ বছরেও বিচার ও ক্ষতিপূরণ পাইনি শ্রমিকরা।
বাংলাদেশের ঢাকার মহানগরীর উপকণ্ঠ আশুলিয়ার
নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড কারখানায় ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর
সংঘটিত একটি মারাত্মক অগ্নিকাণ্ড যাতে মোট ১১৭ জন পোষাক শ্রমিক নিহত হয় ও ২০০ জনের
অধিক আহত হয়। ভয়ানক এই দুর্ঘটনায় ঐ পোশাক কারখানার ৯তলা ভবনের ৬তলা ভস্মীভূত হয়ে
যায়। সরাসরি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় ১০১ জন পোষাক শ্রমিক ও আগুন থেকে রেহাই পেতে
ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু হয় আরও ১০ জনের। ২৭ নভেম্বর ২০১২, মঙ্গলবার বাংলাদেশে
শোক দিবস পালিত হয়। এটি দেশের ইতিহাসে কারখানায় সবচেয়ে মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লেগেছিল বলে ধারণা করা হয়, কিন্তু
সংসদের এক আলোচনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়,
এ ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে”। শ্রমিক সংগঠন গুলো মনে করে ইনস্যুরেন্স ও বায়ারদের
কাছ থেকে সুবিধা নিতে মালিকপক্ষ পরিকল্পিতভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।
এই ঘটনা ও পরে অনুরূপ কিছু ঘটনার পর বাংলাদেশের
শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা আইনগুলিতে নানাবিধ সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়। তাজরীন ফ্যাশন
কারখানাটি ২০০৯ সালে চালু হয়। এখানে প্রায় ১৬৩০ জন শ্রমিক কাজ করত। কারখানাটি বিভিন্ন
সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি টি-শার্ট, পোলো শার্ট এবং জ্যাকেট তৈরি করত, যাদের
মধ্যে রয়েছে মার্কিন মেরিনস, ওলন্দাজ কোম্পানি সি এন্ড এ, মার্কিন কোম্পানি ওয়ালমার্ট
এবং হংকং-ভিত্তিক কোম্পানি লি অ্যান্ড ফুং। এই কারখানাটি বাংলাদেশের অন্যতম পোশাক রপ্তানিকারক
প্রতিষ্ঠান তুবা গ্রুপের অংশ ছিল যারা জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি এবং নেদারল্যান্ডে
পোশাক রপ্তানি করত। এর প্রধান খদ্দের ছিল ওয়ালমার্ট, কারেফোর এবং আইকিয়া। তাজরিন
ফ্যাশনসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২০১১ সালের মে মাসে ওয়ালমার্টের একজন এথিকাল সোর্সিং
অফিসার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয় এমন পরিস্থিতি রয়েছে এবং/অথবা লঙ্ঘন করেছে
মর্মে কমলা গ্রেড দিয়ে কারখানাটি পতাকাঙ্কিত করেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ২ বছর
মেয়াদে ৩টি কমলা গ্রেড মূল্যায়ন পাওয়া যে কোন কারখানা এক বছরের জন্য ওয়ালমার্ট
থেকে কোন অর্ডার পাবে না। কোম্পানিটি কমলা রেটিং এই প্রথম পায়, ও পরের আগস্টে হলুদ
মাঝারি ঝুঁকির রেটিং পায় (যেখানে আগুন লাগে সেটি তার অংশ ছিল)।
২৫ নভেম্বর ওয়ালমার্টের একজন মুখপাত্র বলেন
যে তিনি এটা নিশ্চিত করতে পারছেন না যে তাজরিন ওয়ালমার্টের সরবরাহকারী কিনা এবং নিবন্ধে
উল্লেখিত নথিটি আসলে ওয়ালমার্ট থেকে পাওয়া কিনা পরে কোম্পানিটি তাজরিনের সাথে তার
সম্পর্কের ইতি টানে ও জানায় যে [আশুলিয়াতে] তাজরিন কারখানাটি ওয়ালমার্টের পণ্যদ্রব্য
উৎপাদন করার জন্য অনুমোদিত নয়। অনুমোদন ছাড়া [তাঁদের] এক সরবরাহকারী এই কারখানাতে
কাজের অধীনচুক্তি (সাবকনট্রাক্ট) করে এবং এটি আমাদের নীতির সরাসরি লঙ্ঘন। ওয়ালমার্ট
সমালোচকরা দাবি করে যে ওয়ালমার্ট কোম্পানিটির অনিরাপদ অবস্থার বিষয়ে জানত এবং অবস্থা
উন্নত করার প্রচেষ্টাগুলি বন্ধ করে দেয়। ইমেলের মাধ্যমে পাওয়া নথিগুলিতে দেখা যায়
যে তাজরিন কারখানার মাধ্যমে ওয়ালমার্ট একাধিক পোশাক উৎপাদনের আদেশের অধীনচুক্তি করেছিল।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, ২০১১ সালের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশি
তৈরি পোশাকের বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে কারখানার বৈদ্যুতিক ও অগ্নি নিরাপত্তার জন্য
বাড়তি অর্থ আদায়ের প্রস্তাবে ওয়ালমার্টের প্রতিনিধি আপত্তি জানিয়েছিলেন।
ওয়ালমার্টের পরিচালক শ্রীদেবী কালাভাকোলানু
বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৪৫০০ পোশাক কারখানার বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ও অগ্নিকাণ্ড
প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে বিশাল ও ব্যয়বহুলও এই পরিমাণ বিনিয়োগ করা ব্র্যান্ডগুলোর
জন্য আর্থিকভাবে বাস্তবসম্মত নয়। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়
বলে ধারণা করে হয়। সন্ধ্যায় তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডে আগুন লাগে। ৯তলা ভবনের নিচতলায়
আগুন লেগে মুহূর্তেই আগুনের ধোঁয়া ও শিখা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে থাকে। যার কারণে
ভবনের উপরের তলার শ্রমিকরা আটকা পড়ে যান। কারখানার বৃহৎ পরিমাণে ফ্যাব্রিক এবং সুতা
থাকার কারণে, আগুন দ্রুত অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে, যা অগ্নিনির্বাপকের কাজকে জটিল
করে। পরদিন রবিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। ৯ তলা ভবনের
তৃতীয় তলা থেকে সবচেয়ে বেশি ৬৯ টি লাশ উদ্ধার করা হয়, চতুর্থ তলায় ২১ এবং পঞ্চম
তলায় ১০টি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় যে অনেক শ্রমিক ভবনের সংকীর্ণ প্রস্থানের পথ দিয়ে
নিচে নামতে পারছিলেন না। প্রাণে বাঁচতে লাফিয়ে পড়ে মারা যায় ১২ জন শ্রমিক, যাদের
মধ্যে কয়েকজনকে আহতবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মারা যান। কিছু শ্রমিক ভবনটির
ছাঁদে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন যাদের পরে সফলভাবে উদ্ধার করা হয়। দমকল বাহিনীর অপারেশন
ব্যবস্থাপক মো. মাহবুব জানান, কারখানাটিতে পর্যাপ্ত জরুরি প্রস্থানের অভাব ছিল যা দিয়ে
দিয়ে ভবন থেকে নামা যেত। ভবনে ৩টি সিঁড়ি ছিল, যেগুলির সবগুলি নিচতলায় এসে মিলিত
হয়। নিচ তলায় আগুন লাগার কারণে এগুলি ব্যবহার করা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং অব্যবহারযোগ্য
হয়ে উঠে। এতে অনেক শ্রমিক আটকা পড়েন এবং আগুন থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারছিলেন না।
এই ঘটনায় ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের আত্মীয় স্বজন ও হাজার হাজার প্রত্যক্ষদর্শী জড়ো হয়।
পরে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সেনা মোতায়েন
করা হয়। অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেন
এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন। তিনি সন্দেহ
করেন যে পরিকল্পিতভাবে অগ্নি অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেক
পরিবারকে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা করে অর্থসহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
তাজরিন ফ্যাশনের অন্যতম ক্রেতা প্রতিষ্ঠান হংকংভিত্তিক লিং অ্যান্ড ফাং এই ঘটনায় গভীর
দুঃখ প্রকাশ করে ও জানায় তারা নিজেদের উদ্যোগে আগুনের ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখবে।
তাজরিন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ার হোসেন কারখানার কাজের পরিবেশ ভালো ছিলো বলে দাবি করেন
ও বলেন যে এটা আমার কর্মীদের এবং আমার কারখানা জন্য একটি বিশাল ক্ষতি। আমার ৭টি কারখানার
মধ্যে এই প্রথম কোন কারখানায় আগুন লাগল। তদন্তকারীরা জানায় ২০১২ সালের জুনে কারখানার
আগুনের নিরাপত্তার সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফৌজদারি অবহেলার অভিযোগে ২৮
নভেম্বর কারখানার তিনজন তত্ত্বাবধায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। বের হওয়ার পথে তালা দিয়ে
শ্রমিকদের ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে বাধা দেয়ার অভিযোগে পুলিশ তাদের অভিযুক্ত করে।
দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিয়ে বেঁচে যাওয়া
এক শ্রমিক মোহাম্মদ রিপু জানান, কারখানা ব্যবস্থাপক তাদেরকে বলেছিলেন, আগুন লাগার এলার্ম
নষ্ট হয়ে গেছে। কাজ ফিরে যাও।এই ঘটনার পর হাজার হাজার বাংলাদেশী গার্মেন্টস কর্মী
বিক্ষোভ মিছিল করে, কর্মসংস্থানে নিরাপত্তার জন্য আহ্বান জানান। এই বিক্ষোভ তিন দিন
ধরে চলে এবং একটি প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। বিক্ষভের সময়
দুই শতাধিক কারখানার মালিক তাদের ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। কারখানার মালিকরা কারখানার
অভ্যন্তরীণ সরঞ্জামগুলি রক্ষা করতে তালা লাগিয়েছেন জানান। এছাড়া, সরকার নিহতদের স্মরণে
২৭ নভেম্বর ২০১২ তারিখে জাতীয় শোক দিবস পালনের ঘোষণা দেয়।
২৭ নভেম্বর, ওয়ালমার্ট আমেরিকা তুবা কোম্পানির
সাথে চুক্তি বাতিল করে, ওয়ালমার্ট জানায় যে তাদের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের অনুমোদন
ছাড়াই তাজরিন ফ্যাশনসকে পোশাক তৈরি করতে দেয়ার চুক্তি করেছে। ওয়ালমার্টের বিবৃতিতে
আরো বলা হয়, “এই ঘটনা আমাদের জন্য চরম বিব্রতকর। অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ক শিক্ষা ও
প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নে আমরা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে কাজ করে যাবো।” ওয়ালমার্ট
আরও বলে যে তারা ইনস্টিটিউট ফর সাসটেনেবল কমুনিটিজকে এক দশমিক ছয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার
দান করবে, যারা বাংলাদেশে পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা একাডেমী প্রতিষ্ঠার জন্য দান
ব্যবহার করবে। শ্রমিক অধিকার সংঘের নির্বাহী পরিচালক স্কট নোভা বলেন, দানটি শিল্পকে
নিরাপদ করার জন্য খুব কম, বিশেষ করে যেহেতু বেশিরভাগ কারখানায় অগ্নিনির্বাপকের মতো
মৌলিক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলি নেই। ১৫ মে ২০১৩ সালে, যেসব কোম্পানির পোশাক তাজরিন
ডিজাইন লিমিটেডের কারখানাতে তৈরি হয়েছিল তারা আগুনের ক্ষতিগ্রস্থের জন্য ক্ষতিপূরণ
প্রদানের বিষয়ে জেনেভাতে এক বৈঠকে বসেন; ওয়ালমার্ট ও সিয়ার্স অজানা কারণে সভায়
তাদের প্রতিনিধিদের পাঠাতে অস্বীকার করে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক
সমিতি নিরাপত্তা ও শ্রম মানদণ্ডের পালন না করার কারণে ৮৫০টি কারখানাকে তাদের সদস্যপদ
থেকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভের সদস্যরা
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের কার্যালয়কে জিএসপির জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় যোগ্যতার
পর্যালোচনা সম্পূর্ণ করতে আহ্বান জানায়। এই ভয়াবহ অগ্নিঘটনার কারণ নিরূপণ করতে বাংলাদেশ
সরকারের তরফ থেকে ৪ দফা তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা
বিভাগীয় কমিশনার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর এবং বাংলাদেশ পুলিশ -সরকারের
এই চারটি অঙ্গ পৃথক পৃথক তদন্ত কার্যক্রম গ্রহণ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত
তদন্ত কমিটি ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে ‘আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশন
লিমিটিড এ সংঘটিত মর্মান্তিক অগ্নিকান্ডের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত
কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন’ শিরোনামে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেড এর মালিককে দণ্ড-বিধির
তিন শত চার (ক) ধারায় আইনের আওতায় এনে বিচারে সোপর্দ করার সুপারিশ করা হয়। তাজরীন
ফ্যাশন গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম
একটি মামলা করেন। অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পর ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান আদালতে অভিযোগপত্র
দাখিল করেন। পুলিশ তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার
হোসেনকে গ্রেফতারের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের
বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।
২০১৯ অনুযায়ী ১০৪ সাক্ষীর মধ্যে ৭ জনের
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ২০১৩ সালের নভেম্বরে, ৩টি নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ দল, বাংলাদেশে
অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি, অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি
এবং ন্যাশনাল ট্রিপার্টাইট অ্যাকশন প্ল্যান, বস্ত্র উৎপাদন কারখানাগুলির জন্য কর্মক্ষেত্রে
নিরাপত্তার মানের একটি নতুন একীভূত সেট গ্রহণে সম্মত হয়। কারখানা ও শ্রমিক কল্যাণ
বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে ওয়াল-মার্ট এবং গ্যাপ ইনকর্পোরেটেডের ২৪টি মার্কিন কোম্পানি
একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার
মূল আসামি তাজরীনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। মামলার সুরাহা
হয়নি ১২ বছরেও। অথচ এই দেলোয়ার হোসেনকে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি করা
হয়েছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন
অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেলোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও আবদুল জলিলকে সাধারণ সম্পাদক চূড়ান্ত করা
হয়। ২০১৮ সালে রাজনীতি শুরু করেছেন দেলোয়ার। সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিতে টাকার বিনিময়ে
নেতৃত্বের পদ বাগিয়ে নিচ্ছেন অথচ খুনের মামলার বিচার শেষ হয়নি। ২০১২ সালে আশুলিয়ার
নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনসের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার পরপরই কারখানার
তৃতীয় তলার ফটকে তালা মেরে দেওয়া হয়েছিল।
এতে ১১৭ জন শ্রমিক নিহত হন। অগ্নিদুর্ঘটনার
পরের বছর সিআইডি অভিযোগপত্র দেয়। আসামিরা হলেন তাজরীনের এমডি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন,
তাঁর স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ,
প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলামসহ ১৩ জন। বর্তমানে আসামিরা
সবাই জামিনে আছেন। মামলার সাক্ষী ১০৪ জন। তাজরীনের ঘটনায় ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির
এমডিসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। তবে সাক্ষী
হাজির না করতে পেরে বারবার সময় নেয় রাষ্ট্রপক্ষ।
শেখ হাসিনা সরকার বিদায় নেওয়ার মধ্যো দিয়ে এখন সুযোগ এসেছে এই হত্যা কান্ডের বিচার করার। তাজরিন গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক হত্যা কান্ডে এমন একটা বিচার করতে হবে যাতে গার্মেন্টস মালিকরা কোন কারখানায় এই ধরনের শ্রমিক হত্যা কান্ড ঘটাতে না পারে। প্রতিটি কারখানা যাতে নিরাপদ কর্মস্থল হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। তাজরীন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ারসহ হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিহত শ্রমিকদের পরিবার এবং আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য আজীবন আয়ের মানদণ্ডে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
লিখেছেনঃ
খাইরুল মামুন মিন্টু, আইন বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড
ইউনিয়ন কেন্দ্র
No comments:
Post a Comment