বাংলাদেশের
অর্থনীতির মেরুদণ্ড হলো পোশাক শিল্প। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে
এই খাত থেকে। বিশ্বজুড়ে 'মেইড ইন বাংলাদেশ' ট্যাগটি এখন একটি পরিচিত ব্র্যান্ড।
কিন্তু এই সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে হাজার হাজার শ্রমিকের দুর্দশার করুণ চিত্র।
গার্মেন্টস
শিল্পের শ্রমিকদের অধিকাংশই নারী। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষগুলো শহরে আসে উন্নত
জীবনের আশায়। কিন্তু তাদের স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। তাদের কাজের পরিবেশ, মজুরি
এবং সামাজিক নিরাপত্তা—সবকিছুই অত্যন্ত নাজুক।
২০২৪ সালের ৫ই
আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক নাটকীয় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে
গেছে। এই পরিবর্তন দেশের অর্থনৈতিক খাত, বিশেষ করে প্রধান রপ্তানি শিল্প তৈরি
পোশাক শিল্প-এর ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে
পরিচিত এই শিল্পটি রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আওয়ামী
লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই
রাজনৈতিক পটপরিবর্তন দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ, উত্তেজনা এবং অনিশ্চয়তা তৈরি করে।
গণআন্দোলন এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতিতে কিছু অঞ্চলে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে
পড়ে, যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। এই
পরিস্থিতিতে অনেক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং সরবরাহ শৃঙ্খল (supply chain)
ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্বল্প
মজুরি ও কাজের চাপ:
এই
শিল্পের শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তাদের বেতন। জীবনযাত্রার ব্যয়
প্রতিনিয়ত বাড়লেও মজুরি বাড়ে না সেই হারে। একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি প্রায়ই
তার পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট হয় না। ফলে তাদের অনেককেই দিনে ১২
থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয় অতিরিক্ত আয়ের জন্য। অতিরিক্ত কাজের চাপ, কম বিশ্রাম
এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব
ফেলে।
নিরাপত্তাহীনতা
ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা:
পোশাক
কারখানায় প্রায়ই অগ্নিদুর্ঘটনা এবং ভবন ধসের মতো ঘটনা ঘটে। এর কারণ হলো কারখানার
দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং তদারকির অভাব। শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার
জন্য যেসব আইন ও নীতিমালা আছে, তার অধিকাংশই ঠিকভাবে মানা হয় না। এছাড়া, শ্রমিক
ইউনিয়ন করার অধিকার থাকলেও অনেক কারখানায় শ্রমিকরা তা থেকে বঞ্চিত হয়। কোনো
শ্রমিক নিজের অধিকার নিয়ে কথা বললে তাকে চাকরি হারানোর হুমকির মুখে পড়তে হয়।
সামাজিক
মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার অভাব:
পোশাক
শিল্পের শ্রমিকরা সমাজে অনেক সময় অবহেলার শিকার হন। তারা যে দেশের অর্থনীতিতে এত
বড় অবদান রাখছেন, সেই সম্মান তাদের দেওয়া হয় না। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং
বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তাদের
জন্য যে সুযোগ-সুবিধা আছে, তার বেশিরভাগই অপ্রতুল।
বাংলাদেশের
পোশাক শিল্প বৈশ্বিক বাজারে তার স্থান ধরে রেখেছে এবং ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু
এই অগ্রগতি তখনই টেকসই হবে যখন এর ভিত্তি—শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নতি হবে।
শ্রমিকদের যথাযথ মজুরি, কাজের উন্নত পরিবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
অত্যন্ত জরুরি। শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, মানবিক উন্নয়নের দিকেও আমাদের নজর
দিতে হবে।
অর্ন্তবর্তীকালিন সরকারের আমলে
বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিরা যে সীমাহীন দুঃখ দুর্দশা:
গত
৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত অর্থাৎ বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালিন সরকারের
আমলে বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিরা যে সীমাহীন দুঃখ দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে
যা বিগত সরকার গুলোর আমলের থেকে বেশী। যেমন শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুত, কারখানা বন্ধ,
মামলা, কারাবরণ এবং শ্রমিক হত্যার মত ঘটনা ঘটেছে।
ব্যাপক
হারে চাকরিচ্যুতি ও কারখানা বন্ধ:
বিভিন্ন
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত প্রায়
শতাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু কারখানা স্থায়ীভাবে, কিছু কারখানা
সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। এই সময়ে প্রায় দুই লক্ষ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। শুধুমাত্র
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৭২টি কারখানা
বন্ধ হয়েছে, যার ফলে প্রায় ৭৩ হাজার শ্রমিক চাকুরী হারিয়েছে। বেশীর ভাগ শ্রমিক
এখনো চাকুরী না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে বেকার জীবন যাপন করছেন। যে
সব পরিবারে এখন একজন উপার্জনক্ষম সেই পরিবারে উপার্জনক্ষম বেক্তির পক্ষে সংসার
চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাকে কারখানায় বাড়তি শ্রম না দিলে হচ্ছে না। অর্থাৎ সুধু
মাসিক বেতনের উপর নির্ভর না থেকে তাকে বাদ্ধ্যতামূলক ওভারটাইম করতে হচ্ছে। এই
অতিরিক্ত কাজের চাপ, কম বিশ্রাম এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তাদের শারীরিক ও মানসিক
স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
শ্রমিক
আন্দোলন ও নির্মম দমন-পীড়ন:
বেতন
বৃদ্ধি, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, টিফিন বিল বৃদ্ধি সহ শ্রমিকদের
বিভিন্ন দাবী নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে গত বছর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর
এই তিন মাসে তিনজন শ্রমিক নিহত হয়েছে, শ্রমিকদের নামে কত মামলা হয়েছে এবং কতজন
শ্রমিক কারাবরণ করেছেন, তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে শ্রমিক অসন্তোষ
এবং আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে হাজার হাজার শ্রমিককে মামলা ও হয়রানির শিকার হতে
হয়েছে এবং বহু শ্রমিককে কারাবরণ করতে হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৫
পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এই শিল্পের শ্রমিকদের দুর্দশা অতীতের সব
রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চাকরিচ্যুতি, কারখানা বন্ধ, মামলা, কারাবরণ এবং শ্রমিক
হত্যার মতো ঘটনা শ্রমিকদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। তবে এটি স্পষ্ট যে
শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের পথটি বর্তমানে আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের
পোশাক শিল্প বৈশ্বিক বাজারে তার অবস্থান ধরে রেখেছে, কিন্তু এই অগ্রগতির পেছনে
শ্রমিকদের সীমাহীন ত্যাগ ও দুর্দশা লুকিয়ে আছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য শুধুমাত্র
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নতি এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত
করাও জরুরি।
বাংলাদেশের
পোশাক শিল্পের রাজনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী এবং দেশের সামগ্রিক রাজনীতিতে
এর গভীর প্রভাব রয়েছে। এই শিল্প শুধু অর্থনীতির মেরুদণ্ডই নয়, বরং রাজনৈতিক
ক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
নীতি নির্ধারণে প্রভাব:
গার্মেন্টস
মালিকরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি শক্তিশালী লবি তৈরি করেছে। তারা বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এবং প্রায়শই নীতি নির্ধারণে প্রত্যক্ষ
প্রভাব ফেলে। সরকারের শিল্পনীতি, শ্রম আইন এবং রপ্তানি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলোতে
তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সংসদ সদস্য হিসেবে মালিক:
অনেক
গার্মেন্টস কারখানার মালিক সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত। তারা সংসদ সদস্য বা উচ্চ পদস্থ
রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছেন, যা তাদের রাজনৈতিক প্রভাবকে
আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এর ফলে, তারা তাদের ব্যবসার স্বার্থ রক্ষার জন্য সরাসরি আইন
প্রণয়নে অংশ নিতে পারেন।
শ্রমিক আন্দোলন:
রাজনৈতিক
অস্থিরতার সময় শ্রমিক আন্দোলন প্রায়শই সহিংস রূপ নেয়। মজুরি বৃদ্ধি, উন্নত
কাজের পরিবেশ এবং অন্যান্য অধিকার আদায়ের দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করলে রাজনৈতিক
দলগুলো এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। অনেক সময় দেখা
যায়, ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দলের স্থানীয় নেতারা শ্রমিক অসন্তোষকে উসকে দিয়ে
নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেন।
ঝুট ব্যবসা:
পোশাক
কারখানার ঝুট (বাকি কাপড়) ব্যবসা একটি বড় রাজনৈতিক সংঘাতের কারণ। ক্ষমতাসীন দলের
নেতাকর্মীরা এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সরকার বদল হলে ঝুট ব্যবসার
নিয়ন্ত্রণ নিয়েও রাজনৈতিক কোন্দল দেখা যায়, যা কারখানার পরিবেশকে অস্থির করে
তোলে।
সহায়তা ও প্রণোদনা:
সরকার
পোশাক শিল্পকে দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে। তাই এই
শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা, কর সুবিধা এবং নীতিগত
সহায়তা প্রদান করে।
সাম্প্রতিক পরিবর্তন:
অন্তর্বর্তীকালীন
সরকারের আমলে গার্মেন্টস মালিকদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে থাকার জন্য আহ্বান জানানো
হয়েছে। তবে এটি এখনও দেখা বাকি যে এই আহ্বান কতটা কার্যকর হবে এবং কীভাবে
ভবিষ্যতে এই শিল্পের রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তিত হবে।
বাংলাদেশের
পোশাক শিল্প এবং রাজনীতি একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই সম্পর্ক একদিকে যেমন
শিল্পের জন্য বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করে, তেমনি অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং
সংঘাতের উৎস হিসেবেও কাজ করে।
গার্মেন্টস
শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করতে এবং এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ও মালিকপক্ষ
উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা জরুরি। শুধু এক পক্ষের উদ্যোগে সমস্যার
সমাধান সম্ভব নয়, বরং সমন্বিত পদক্ষেপই পারে এই খাতের সংকট দূর করতে।
শ্রম আইন ও এর বাস্তবায়ন:
সরকার
শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর শ্রম আইন প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত
করতে পারে। আইনে নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি, কাজের সময়সীমা এবং ওভারটাইমের নিয়ম
কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। শ্রমিকদের হয়রানি ও ছাঁটাই বন্ধে সুনির্দিষ্ট আইন
ও শাস্তির বিধান থাকা দরকার।
কারখানা তদারকি ও নিরাপত্তা:
বিভিন্ন
সময়ে কারখানা বন্ধ এবং শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কারণগুলো তদন্ত করে দেখা এবং দায়ী
মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, অগ্নিনিরাপত্তা ও
কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত পরিদর্শন ও তদারকির ব্যবস্থা
করা দরকার।
সামাজিক নিরাপত্তা:
বেকার
শ্রমিকদের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা যেতে পারে, যা থেকে তারা চাকরি
হারানোকালীন সময়ে আর্থিক সহায়তা পেতে পারেন। এর পাশাপাশি, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য
বীমা এবং সন্তানদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
শ্রমিক ইউনিয়ন শক্তিশালীকরণ:
শ্রমিকদের
নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য শক্তিশালী ও স্বাধীন শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনে সহায়তা
করা উচিত। ইউনিয়নের নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা কোনো ভয় ছাড়াই
শ্রমিকদের পক্ষ হয়ে কথা বলতে পারেন।
বৈদেশিক চাপ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক:
সরকার
বিদেশি ক্রেতাদের সাথে আলোচনা করে পোশাকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য কাজ
করতে পারে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক
সংগঠনের সাথে যৌথভাবে শ্রমমান উন্নত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
ন্যায্য মজুরি ও কাজের পরিবেশ:
মালিকদের
উচিত শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে মজুরি ও বাৎসরিক
ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি করা। স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং
অতিরিক্ত কাজের চাপ কমিয়ে আনা জরুরি। শ্রমিকদের মানবিক মর্যাদা দিয়ে দেখতে হবে।
শ্রমিক-বান্ধব নীতি:
মালিকদের
উচিত কারখানায় এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে শ্রমিকরা কোনো ভয় ছাড়াই তাদের
সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারেন। শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরিবর্তে বিকল্প উপায় যেমন, দক্ষতা
উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের অন্য কাজে যুক্ত করার চেষ্টা করা যেতে পারে।
কল্যাণমূলক ব্যবস্থা:
শ্রমিকদের
জন্য ভালো মানের ক্যান্টিন, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, এবং স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা
করা উচিত। এটি শুধু শ্রমিকদের মনোবলই বাড়াবে না, বরং উৎপাদনশীলতাও বাড়াতে সাহায্য
করবে।
ত্রিপক্ষীয় আলোচনা:
সরকার,
মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে নিয়মিত আলোচনার ব্যবস্থা করা উচিত, যেখানে
সবার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এই ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা ও
সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব।
গার্মেন্টস
শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই, সরকার ও মালিকপক্ষের
সম্মিলিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টা ছাড়া এই শিল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
লিখেছেনঃ খাইরুল মামুন মিন্টু, আইন
বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র